Saturday, July 18, 2009

প্রবাসী যারা বাংলাদেশে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক; তাদের জন্য।।...........(RE)

প্রবাসী বাংলাদেশীদের (NBR) বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে পুঁজি বিনিয়োগ করার ব্যাপারে আমি যতটুকু এই বিষয়ে জানি তা শেয়ার করছি;

বাংলাদেশে দুটি ষ্টক এক্সচেঞ্জ মার্কেট আছে। ১) ঢাকা ষ্টক এক্সচেঞ্জ ২) চট্টগ্রাম ষ্টক এক্সচেঞ্জ। এই দুটি এক্সচেঞ্জ থেকে প্রাইমারী শেয়ার(IPO) বাজারে ছাড়া হয়। প্রাথমিক শেয়ার ক্রয়ে জন্য সকল ব্যাক্তিবর্গ বা প্রতিষ্ঠানের নামে অবশ্যই একটি ব্যাংক একাউন্ট ও শেয়ার ব্রোকার হাউজের BO একাউন্ট থাকতে হবে। এবং BO একাউন্ট দ্বারা প্রাথমিক শেয়ার ক্রয়ে আগ্রহীদের নির্দিষ্ট শেয়ার মূল্যের দাম সহ আবেদন করতে হইবে। অতঃপর এক্সচেঞ্জ মার্কেট ঘোষিত নির্দিষ্ট দিন ও সময়ে লটারীর মাধ্যমে বিজয়ীদের কাছে শেয়ার বিক্রয় করা হয়। যারা বিজয়ী হন না তাদের আনুমানিক এক মাসের মধ্যে জমাকৃত সব টাকা ফেরৎ দেয়া হয়। প্রাইমারী শেয়ার অতঃপর বিজয়ীরা ব্রোকার হাউজের মাধ্যমে আবার বিক্রি করতে পারেন অন্য যে কারো কাছে। এবং তখন যে শেয়ারের লেনদেন হয় তাকে সেকেন্ডারী শেয়ার বলা হয়।

যে সমস্ত কোম্পানি পুঁজি সংগ্রহের জন্য বাজারে শেয়ার ছাড়ে তা প্রাইমারী মার্কেটে কোম্পানি নিধারিত মূল্যে ক্রয় করা যায়। প্রাইমারী শেয়ার ক্রয়ের পর তা সেকেন্ডারী মার্কেটে বিক্রয় করিতে গেলে কম্পানি ভেদে সাধারনত ক্ষেত্র বিশেষে বিনিয়োগের কমপক্ষে ১৫০% থেকে ৫০০% মুনাফা সম্ভব হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারো বেশি হয়। উল্লেখ্য প্রাইমারী শেয়ারের বিনিয়োগ বলা যায় সম্পূর্ণ নিরাপদ । কিন্তু নির্ধারিত মূল্যের অধিক মূল্যে সেকেন্ডারী মার্কেটে শেয়ার বিক্রয় হয় বিধায় সেখানে অধিক পরিমাণে রিক্স থাকে।

এখন আসি প্রবাসীদের বিনিয়োগের ব্যাপারে; প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মোট শেয়ারের ১০% এর কোঠা বরাদ্দ থাকে। ধরুন কোন কোম্পানি মোট ১০০ টাকার শেয়ার ছেড়েছে বাজারে। তো এই ১০০ টাকার ১০ টাকার শেয়ার শুধু মাত্র প্রবাসীদের জন্য নির্ধারিত রেখে সকল প্রবাসীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের মধ্যে লটারী করে বিতরন করা হয়। সেই ক্ষেত্রে প্রবাসীদের প্রাইমারী শেয়ার পাবার সম্ভবনা একটু বেশি থাকে। তবে এখানে একটু ট্রিক্সের ব্যাপার আছে। (যদি কেউ এই ব্যাবসা করতে আগ্রহী হোন তাহলে আমার সাথে যোগাযোগ করলে সেই বিষয়ে আলোচনা করা যাবে।)

এখন প্রশ্ন হচ্ছে প্রবাসীরা কি ভাবে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে পারবেন? এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অবস্থিত যে কোন ব্যাংকে (যারা FC একাউন্ট খোলে) আপনাকে ফরেন কারেন্সি একাউন্ট ও শেয়ার ব্রোকার এজেন্সিতে BO একাউন্ট খুলতে হবে । এবং যেহেতু আপনি বিদেশে অবস্থান করছেন তাই আপনাকে বাংলাদেশে অবস্থানরত আপনার বিশ্বস্ত পূর্ণ বয়স্ক যে কেউ একজনকে আপনার পক্ষে প্রতিনিধি নিয়োগ করতে হবে। যাকে আপনি আপনার ব্যাংক সহ যাবতীয় শেয়ার সংক্রান্ত কর্মকান্ডের পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট ফরমের মাধ্যমে Power of Attorney প্রদান করবেন।

ফরেন কারেন্সি একাউন্ট অবশ্য ইউ,এস ডলারে খুলবেন এবং খেয়াল রাখবেন যাতে একাউন্টটি কারেন্ট FC একাউন্ট হয়। আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখবেন বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশী মালিকানার ব্যাংক ছাড়া দেশি ব্যাংক গুলোতে FC একাউন্টের জন্য কোন প্রকার ফি নেয়া হয় না। বিদেশি ব্যাংক গুলোর মধ্যে HSBC ও Standard Chartered Bank উল্লেখ যোগ্য। তারা সাধারণত বাৎসরিক ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা ফি নেয়। আবার নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা একাউণ্টে জমা রাখলে তারা আবার ফি নেয় না। বিদেশি ব্যাংক দুটোতে বিশেষ যে সুবিধা আপনি পাবেন তা হলো তারা আপনাকে ATM কার্ড দিবে যেটা দিয়ে আপনি বিদেশে ও দেশে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। যদিও আমি দেশী ব্যাংক গুলোতে একাউন্ট খোলার পক্ষপাতি কোন রকম ফি না থাকার কারণে।

যাই হোক, আপনি যদি বিদেশে অবস্থান করা অবস্থায় একাউণ্ট খুলতে চান তাহলে আপনাকে আপনার পছন্দের ব্যাংক ও ব্রোকার হাউজ থেকে একাউন্ট ওপেনিং সংক্রান্ত সকল ফরম, Power of Attorney ফরম ও আপনার নিযুক্ত ব্যাক্তির ২/৪ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি আনতে হবে।

ফরম সব গুলো পূরণ করা সহ ছবি গুলোর পেছনে আপনার স্বাক্ষর করতে হবে। এখানে উল্লেক্ষ্য যেহেতু আপনি বিদেশে অবস্থান করছেন তাই স্বাক্ষর করার সময় আপনাকে অবশ্যি বাংলাদেশের ১ম শ্রেনীর সরকারী কর্মকতার সামনে করতে হবে। তার মানে বিদেশে একমাত্র বাংলাদেশী কর্মকর্তা পাবেন আপনি বাংলাদেশের দূতাবাস সমূহে। তারা এই ব্যাপারে বেশ অভিজ্ঞ। তাই ফরম সব পূরন করে তা তাদের কাছে নিয়ে গেলেই তারা আপনাকে যথাযথ সাহায্য করবে ইনশাল্লাহ।

ফরম ছাড়া আপনাকে আরো যে সকল কাগজ পত্রের ফটোকপি বাংলাদেশ দূতাবাস দ্বারা Attached করে ফরমের সাথে পাঠাতে হবে তা হলো;

১) আপনার পাসপোর্ট
২) ভিসা
৩) ওয়ার্ক পারমিড
৪) ট্যাক্স পেপার বা পে সিলিপ
৫) যেখানে চাকুরী করছেন সেই কম্পানি থেকে লেটার বা ব্যবসা করলে তার ট্রেড লাইন্সেস
৬) আপনার পাসপোর্ট সাইজ ছবি

এগুলো সহ সব কাগজ পত্র পূরণ করে আপনার নিযুক্ত ব্যাক্তির কাছে ডাকযোগে পাঠিয়ে দিন। উনি প্রথমে আপনার নামে ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য সব কাগজ পত্র নির্দিষ্ট ব্যাংকে জমা দিলে কিছু দিনের ভেতর তাকে আপনার একাউন্ট নম্বর সহ একটি সার্টিফিকেট দিবে। অতঃপর সেই সার্টিফিকেট দিয়ে তাকে ব্রোকার হাউজ়ে আপনার প্রেরিত আবেদন ফরমের মাধ্যমে নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে BO একাউন্ট ওপেন করতে হবে। BO একাউণ্ট হয়ে গেলে আপনার FC একাউন্টে বিদেশ থেকে টাকা পাঠিয়ে দিন। তারপর বাজারে নতুন শেয়ার ছাড়ার সাথে সাথে প্রবাসী কোঠায় যত ইচ্ছা শেয়ারের জন্য আবেদন করতে থাকুন। ব্যাস হয়ে গেল।

মনে রাখবেন একজন ব্যক্তি শুধু মাত্র একটি BO একাউন্ট খুলতে পারবেন এবং এর জন্য বাৎসরিক আনুমানিক ৪০০টাকা ফি সহ শেয়ার বিক্রির সময় নির্দিষ্ট কমিশন দিতে হয়।

No comments: