Friday, August 7, 2009

অনেকেরই স্বপ্ন ব্যাংকিং পেশা

মশিউর রহমান বর্তমানে চাকরি করছেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ এবং এমবিএ করে পরীক্ষা দেন বিভিন্ন সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকে। শেষ পর্যন্ত চুড়ান্তভাবে টিকে যান একটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে এবং বেসরকারি ব্যাংকে। কিন্তু যোগ দিয়েছেন ব্যাংকেই।
শুধু মশিউর রহমান নন, তাঁর মতো অনেকেরই পছন্দ আজ ব্যাংকিং পেশা। এ বিষয়ে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আলী বলেন, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতির ফলে দেশে বাণিজ্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গড়ে উঠছে প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক ব্যাংকব্যবস্থা।’ তাঁর মতে, ব্যাংকগুলো এভাবে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি সৃষ্টি করেছে কর্মসংস্থানের।
পেশা হিসেবে কেমন: বর্তমানে দেশে মোট ৪৮টি ব্যাংক ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। এর মধ্যে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত, পাঁচটি বিশেষায়িত, নয়টি বিদেশি এবং ৩০টি বেসরকারি ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সংখ্যা ও শাখা, কার্যক্রম বৃদ্ধি, উন্নত গ্রাহকসেবা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করছে বলে এখানে ক্যারিয়ার গড়ার ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. নাজিমউদ্দৌলা জানান, ক্যারিয়ার হিসেবে ব্যাংকিং পেশা চমৎকার। একজন মেধাবী ব্যাংকার অতি অল্প সময়ে আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন। এ ছাড়া চাকরির নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা তো আছেই।
কাজের ক্ষেত্রগুলো: দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ব্যাংকগুলো তাদের কর্মসুচি চালাতে খুলছে নতুন শাখা। সেই সঙ্গে খোলা হচ্ছে বিভিন্ন বিভাগ। মুহাম্মদ আলী বলেন, ‘ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি আধুনিক ধারার ব্যাংকে সাধারণত বিনিয়োগ, করপোরেট ব্যাংকিং, প্রশাসন ও তদারকি, বিপণন জনসংযোগ ইত্যাদি বিভাগ থাকে। বিভাগ পরিচালনার জন্য থাকেন একজন বিভাগীয় প্রধান। কার্যক্রমের সঙ্গে বিভাগের কাজ যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে লোকের চাহিদাও।
যোগদান ও পদোন্নতি: ব্যাংকগুলো প্রথম সারির কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য সাধারণত ব্যবস্থাপনা শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা (এমটিও) প্রবেশনারি অফিসার (পিও), শিক্ষানবিশ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা (টিএসও) বা ট্রেইনি অফিসার (টিও) পদে আবেদন আহ্বান করা হয়। তবে কোনো কোনো ব্যাংক আবার জুনিয়র অফিসার, অফিসার ইত্যাদি পদে নিয়োগ প্রদান করে থাকে। শিক্ষানবিশকাল শেষে এমটিওকে ফার্স্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার, পিওকে এক্সিকিউটিভ অফিসার এবং টিএসওকে সিনিয়র অফিসার এবং টিওকে অফিসার হিসেবে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতার বলে একজন প্রথম সারির কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়ে এভিপি, ভিপি হয়ে পর্যায়ক্রমে পদোন্নতি পেয়ে তিনি উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) এমনকি ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পর্যন্ত হতে পারেন। নির্দিষ্ট মেয়াদ পেরোলে কর্মকর্তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, চাকরির মেয়াদ, পেশাগত দক্ষতা, ব্যাংকিং জ্ঞান বিবেচনা করে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
বেতন-ভাতাদি: বেসরকারি ব্যাংকগুলো তাদের কর্মকর্তাদের চাকরি শুরুর দিকে ১২ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা বেতন দিয়ে থাকে। জ্যেষ্ঠ নির্বাহী স্তরে অর্থাৎ অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টরদের বেতনক্রম প্রায় ৬০ হাজার থেকে প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার টাকা হয়ে থাকে।
নিয়োগ-প্রক্রিয়া: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করে ব্যাংকার্স রিক্রুটমেন্ট কমিটি। এ ছাড়া অন্য ব্যাংকগুলো যাবতীয় নিয়োগ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক পরিচালিত হয়। শিক্ষানবিশ কর্মী নিয়োগের জন্য পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে ব্যাংকগুলো। অপরদিকে অভিজ্ঞ, দক্ষ কর্মী নিয়োগের জন্য বিভিন্ন উৎস থেকে সিভি সংগ্রহ করা হয়। প্রাথমিক বাছাইয়ের পর সরাসরি মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে বিভিন্ন পদে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়
পরীক্ষা পদ্ধতি ও প্রশ্নের ধরন: শিক্ষানবিশ কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত ও মৌখিক দুই ধরনের পরীক্ষা হয়। লিখিত পরীক্ষায় নির্বাচিত প্রার্থীরা মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন। সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে কিছুটা ভিন্নতা আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বাংলায় বা ইংরেজিতেও হতে পারে। পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, সাধারণ জ্ঞান, মানসিক যুক্তি প্রভৃতি বিষয় থেকে প্রশ্ন হয়। পরীক্ষা শুধু মাল্টিপল চয়েজ কোশ্চেন (এমসিকিউ) অথবা এমসিকিউ এবং সহজ রচনামূলক প্রশ্ন মিলেও হতে পারে।
পড়াশোনা ও যোগ্যতা: ব্যাংকগুলো বর্তমানে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দেয়। সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা হিসেবে এমবিএ, এমবিএম, বাণিজ্যিক বিষয়ে স্মাতকোত্তর, অর্থনীতি, ইংরেজি, পরিসংখ্যান বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। সাধারণত ব্যাংকে নিয়োগের ক্ষেত্রে আগ্রহীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা দ্বিতীয় শ্রেণী চাওয়া হয়। আবার কিছু ব্যাংকে সব পর্যায়েই প্রথম শ্রেণী চায়। এ ছাড়া ইংরেজিতে দক্ষতা ও কম্পিউটার জানা থাকতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্মাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের আবেদন চাওয়া হলে স্মাতক ডিগ্রিধারীরাও অনেক ক্ষেত্রে আবেদন করতে পারেন।
সার্বিক মূল্যায়নে ব্যাংকিং পেশা একটি চমৎকার পেশা। এ পেশায় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার পাশাপাশি নিজেদের জীবনযাত্রার মান, সামাজিক মর্যাদা ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। এসব কারণে ব্যাংকিং ক্যারিয়ার এখন অনেক মেধাবীর স্বপ্ন। তবে সেই স্বপ্ন পূরণে দরকার প্রতিযোগিতামূলক প্রস্তুতি ও চেষ্টা।

সাইদ আরমান

No comments: