Saturday, September 26, 2009

ঘরে বসে বাড়িয়ে নিন দক্ষতা

জাবেদ সুলতান | তারিখ: ২৫-০৯-২০০৯ ১৩:৫০

একটু একটু করেই এগিয়ে নিতে হবে নিজেকে। খুব বেশি কিছু নয় হয়তো; ছোট ছোট দক্ষতা অর্জন করে নিজেকে ঝালাই করে নেওয়া। আর ব্যক্তিগত দক্ষতা বাড়ানোর এমন সাধারণ প্রচেষ্টা সম্ভব ঘরে বসেই; এমনকি অবসরেও। এটি হতে পারে নিজের মধ্যকার কোনো ত্রুটি বা দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা। কিংবা নতুন কোনো কিছু একটা রপ্ত করে ‘পারা’র সীমানাটাকে আরেকটু বাড়িয়ে দেওয়া। দক্ষতা উন্নয়নের এ চেষ্টা হতে পারে একজনের বাচনভঙ্গি থেকে শুরু করে বিশেষায়িত জ্ঞান পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে। চারপাশে চোখ-কান খোলা রেখে ছোট ছোট বদলে যেমন এ ধরনের আত্মোন্নয়ন সম্ভব, তেমনি বই বা পত্রপত্রিকা পড়েও নতুন কোনো কৌশলে নিজেকে দক্ষ করার চেষ্টা করা যেতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে এ বিষয়গুলো এখন অনেক সহজ। কম্পিউটার আর ইন্টারনেট থাকলেই শেখার থাকে অনেক কিছু। আর ইন্টারনেটের মতো তথ্যভাণ্ডার ব্যবহারের সুযোগ থাকলে তো দুনিয়াটাই থাকে হাতের মুঠোয়।

আপনিই জানেন আসলে কী দরকার
ঠিক কোন দক্ষতা অর্জন একজনের কতটা দরকার, সেটা তার পক্ষেই ভালো জানা সম্ভব বলে মনে করেন মানবসম্পদ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ
যিশু তরফদার। যেকোনো উদ্যোগ বা চেষ্টা শুরুর আগে এ বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি। এর ওপর ভিত্তি করেই নির্ধারণ করতে হবে, কোন দক্ষতাটি দরকার তাঁর। তিনি বলেন, নিজেকে জানার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে নিজের সোয়্যোট (SOWT)—অর্থাত্ শক্তি, সুযোগ, দুর্বলতা, ঝুঁকি (স্ট্রেন্থ, অপরচুনিটি, উইকনেস, থ্রেট) বিশ্লেষণ করা।কোন বিষয়ে দুর্বলতা আছে, সেটি আগে চিহ্নিত করুন। এর উন্নয়নে কাজে লাগান আপনার শক্তিগুলো। আর এগুলো নিয়েই লক্ষ্যটা ঠিক করে ফেলুন নিজের মধ্যে কী দক্ষতার উন্নয়ন ঘটাতে চান আপনি। হতে পারে আপনার বাচনভঙ্গি কিংবা উপস্থাপনায় সামান্য কোনো পরিবর্তন, যা হয়তো প্রাত্যহিক চেষ্টায় বদলে ফেলা সম্ভব। আর নতুন কোনো বিশেষায়িত জ্ঞান বা প্রশিক্ষণ নিতে চাইলে সেটাও ঘরে বসে করা সম্ভব। বইপত্র তো আছেই, ইন্টারনেট হতে পারে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর সহায়ক।

দুনিয়াটাই যখন হাতের মুঠোয়
ব্যক্তিগত দক্ষতার উন্নয়ন আর বিশেষায়িত কোনো প্রশিক্ষণই বলেন, এ যুগে ইন্টারনেটই হতে পারে আপনার পথনির্দেশক। এ বিষয়ে ফিউচার লিডারের প্রধান নির্বাহী কাজী এম আহমেদ বলেন, ইন্টারনেটই এখন সবচেয়ে বড় প্রশিক্ষক। হেন কোনো বিষয় নেই যে বিষয়ে কোনো না কোনো নির্দেশনা আপনি পাবেন না ইন্টারনেট থেকে। তাঁর মতে, গুগল (www.google.com)-এর মতো সার্চ ইঞ্জিন থাকলে দক্ষতা অর্জনের অনেক বিষয়ের শুরু করা সম্ভব নিজে নিজে। তথ্য তো বটেই, যেকোনো জিজ্ঞাসা থাকলে তার উত্তর আছে অ্যানসার ডট কমের (www.answer.com) মতো অসংখ্য সাইটে। যেকোনো বিষয়ে জানতে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার (www.wikipedia.org) মতো জায়গা। শুধু তথ্য নয়, বিনামূল্যে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগও আছে অনলাইনে। এ ধরনের ভারচুয়াল শ্রেণীকক্ষে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন হাজারো বিষয়ে। আর এ জন্য সঠিক জায়গাটা খুঁজে বের করাও খুব কষ্টের কিছু না; গুগল আছে না!
আপনার পড়াশোনা হয়তো শেষ কিংবা শেষ পর্যায়ে। চাকরি খুঁজছেন। জীবনবৃত্তান্ত তৈরি, আবেদনপত্র (কভার লেটার) লেখা থেকে শুরু করে চাকরির সাক্ষাত্কারের জন্য পরামর্শের মতো বিষয়ে দক্ষতা বাড়াতে আছে অসংখ্য ওয়েবসাইট। এ বিষয়ে বিদেশি পোর্টালের পাশাপাশি বাংলাদেশেও আছে প্রথম আলো জবস (www.prothom-alojobs.com) কিংবা বিডি জবসের (www.bdjobs.com) মতো চাকরির ওয়েবসাইট। একইভাবে সাধারণ জ্ঞান, আইকিউ (www.iqtest.com) থেকে শুরু করে বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আছে অসংখ্য সাইট। এমনকি বয়স ও দক্ষতার স্তরভেদে শিক্ষা-উপকরণ বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে অনলাইনের এসব প্রশিক্ষণ সাইটে। বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা অর্জনের জন্যও অনেক পোর্টাল গড়ে উঠছে এখন (www.bbc.co.uk/schools)। অনেক দুর্লভ ও ব্যয়বহুল বইও ইন্টারনেট থেকে এখন বিনামূল্যে সংগ্রহ করা সম্ভব। অনলাইনে ওয়েব ডিজাইনের মতো চাহিদাসম্পন্ন কাজও শেখা যায় নিজে নিজে। এ ধরনের কয়েকটি সাইটের মধ্যে আছে http://docs.python.org/tutoria, www.php.net/tut.php, www.joomlatutorials.com.
আর এত কিছুর সঙ্গে নতুন কিছু জানার জন্য আমাদের সব সময়ের সঙ্গী বই তো আছেই। আছে পত্রপত্রিকা, ম্যাগাজিনসহ নানা প্রকাশনা। রেডিও-টেলিভিশনও হতে পারে আপনার দক্ষতা বৃদ্ধির সহায়ক।

কম্পিউটারে দক্ষতা অপরিহার্য
কম্পিউটার চালানো তো শিখতেই হবে, বাড়াতে হবে কম্পিউটারে বিভিন্ন কাজ করার দক্ষতাও। আজকাল কাজের সুবিধার্থে কম্পিউটারে লেখার গতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিভিন্ন কাজ করলে এটা এমনিতেই হয় হয়তো। তবে সঠিকভাবে টাইপিং চর্চা করার জন্য অনেক সফটওয়্যার পাওয়া যায় এখন। নিজের কম্পিউটার না থাকলেও ঘরে বসে টাইপিং চর্চাটা করা সম্ভব। এ জন্য শুধু একটি অচল বা সচল কিবোর্ড হলেও কাজ চালানো সম্ভব। এমনকি কম্পিউটারের সহায়তায় ইংরেজিসহ বিদেশি ভাষায় দক্ষতা অর্জনও সম্ভব ঘরে বসে। অনলাইনে নানা ওয়েবসাইট (www.powertyping.com www.learnenglish.org.uk www.englishlearning.com www.englishclub.com) তো আছেই, পাশাপাশি বিশেষ সিডি/ডিভিডিও এখন বেশ সহজলভ্য। ইংরেজি কিংবা বাংলা, সঠিক উচ্চারণে কথা বলার মতো দরকারি দক্ষতাও ঘরে বসেই নেওয়া যায় এখন। কম্পিউটারে সাধারণ দক্ষতা থাকলে ঘরে বসেই ওয়েবসাইট বানানো শেখা যায়। এ জন্য আছে অনেক অনলাইন টিউটরিয়াল ও পরামর্শ। এ ছাড়া কম্পিউটারে লেখালেখি, হিসাবনিকাশ, যোগাযোগ, উপস্থাপনা, তথ্যভাণ্ডার তৈরি ও ব্যবহার, শব্দ ও ছবি সম্পাদনার কাজ, প্রকাশনাসহ কম্পিউটারভিত্তিক নানা বিষয়ে দক্ষতা অর্জন এখন সময়ের চাহিদা। তবে এগুলোর মধ্যে কোনটি বেছে নেবেন আপনি, সেটা নির্ভর করবে আপনার ভালো লাগা আর প্রয়োজনের ওপর।

এটা সেটা নিয়েই অনেক কিছু
কত কিছু শেখার আছে! ছোট ছোট নানা বিষয়ে আপনার অবস্থান যাচাই করতে পারেন নিজেই। ইন্টারনেট কিংবা বইপত্র ছাড়াও আপনার আশপাশের লোকজন, এমনকি পরিবার-পরিজনের কাছ থেকেও শেখার আছে অনেক কিছু। রান্না করা, হাতের কাজ, ছবি আঁকা, গান করা ইত্যাদির যেকোনোটিতেই দক্ষতা অর্জন করলে কাজে লাগবে জীবনের কোনো না কোনো সময়ে। তবে মনে রাখতে হবে যে বিষয়ে আপনি দক্ষতা অর্জন করতে চাইছেন, সেটি আপনি কতটা পছন্দ করছেন কিংবা আপনার কাজের সঙ্গে এটা কতটা সম্পর্কযুক্ত, সেটাও একটু ভেবে নেওয়া ভালো। বিভিন্ন সময়, জায়গা আর উপলক্ষভেদে আদবকেতা জানাটাও দক্ষতার অংশ। হাঁটা-চলা, কথা বলা থেকে খাওয়া পর্যন্ত সব কিছুরই একটা আলাদা আদব কেতা আছে।
এ বিষয়ে যিশু তরফদার বলেন, কেউ অবসরে তাঁর পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়েও ভাবতে পারেন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভিন্ন ভিন্ন সাজে নিজেকে দেখে, সেখান থেকেও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব। আর এসব বিষয়ে নিজেই নিজের সমালোচনা করতে হবে। সমস্যা ধরতে পারলে এর সমাধান বের করা কঠিন হবে না কখনোই।
এখনকার দিনে যোগাযোগ দক্ষতাটা একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিজেকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করাটাও যোগাযোগ দক্ষতার অংশ।

চর্চা: মস্তিষ্ক সতেজ রাখুন
মস্তিষ্ক সতেজ রাখতেও কিছু চর্চার প্রয়োজন। চেষ্টা করুন আপনার স্মৃতিশক্তি আরেকটু ঝালাই করে নিতে। এ জন্যও কিছু পন্থা আছে। আপনি আপনার নিয়মিত ও সাধারণ কিছু কাজের তালিকা তৈরি করুন। এই ধরুন বাজারে যাবেন, বাজার থেকে এসে ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দেবেন। এ দুটি কাজ করার পর অবসর সময়ে একটু ভাবুন তো, বাজারে যাওয়ার সময় কী কী পথে দেখেছিলেন, কার সঙ্গে দেখা হয়েছিল, কী কথা হয়েছিল ইত্যাদি। চেষ্টা করুন। আস্তে আস্তে এসব বিষয় আরও ভালো মনে করতে পারবেন। এটাও মস্তিষ্কের একধরনের চর্চা। আরও মজার কিছু মস্তিষ্কের ব্যায়াম আছে। আপনি ঘরের ভেতরকার সবকিছুতে একবার ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিন। এবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন কী কী দেখলেন। মনস্থির করুন এখান থেকে দশটা জিনিসকে। চোখ বন্ধ করে এসব জিনিস ট্রেতে ওঠানোর চেষ্টা করুন। কিংবা কাউকে বলুন কিছু জিনিসের জায়গা পরিবর্তন করতে। এ পরিবর্তন ধরতে পারছেন কি? মস্তিষ্কের চর্চার একটা বড় উপাদান হচ্ছে সংখ্যা। মনের মধ্যে সংখ্যা নিয়ে চিন্তা করুন। যেকোনো সংখ্যাই হতে পারে। আপনার সামনে দিয়ে কয়টা গাড়ি গেল কিংবা মনে করার চেষ্টা করুন আপনার পাড়ায় কয়টা বাড়ি আছে—সংখ্যাভিত্তিক এমন নানা কিছু নিয়ে ভাবলেমস্তিষ্কের চর্চা হবে।

সময়ের সঙ্গে থাকুন
কিছু পরিবর্তন আছে, যেগুলোর সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে সত্যিই পিছিয়ে পড়তে হবে আপনাকে। এর মধ্যে আছে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন। প্রযুক্তির ব্যবহার জানলেই হবে না, এসব প্রযুক্তির সর্বশেষ অবস্থায় নিজেকে হালনাগাদ রাখুন। মোদ্দা কথা সময়ের সঙ্গে থাকার চেষ্টাটা জোরেশোরেই করতে হবে।

No comments: